যেকোন বিবাহ বিচ্ছেদ বা ডিভোর্সের কারণ হিসেবে অনেকেই একক ভাবে পরকীয়াকে দায়ী করে, অথচ অধিকাংশ বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে শুধু মাত্র নিজেদের মধ্যকার Compatibility সম্পর্কে না জানার কারণে। তাই কয়েকটি বিষয় জানা জরুরী।
প্রথমত, বিবাহ বিচ্ছেদের বহুবিদ কারণ রয়েছে, পরকীয়া হলো অনেকগুলো ফ্যাক্টরের মধ্যে একটি সম্ভাব্য ফ্যাক্টর মাত্র, এমন কি অনেক বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে সহিংসতা, যৌতুক, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন থাকে। তাই বিবাহ বিচ্ছেদ মানেই পরকীয়ার কারণে হচ্ছে এমনটা ভাবার কোন কারণ নাই। বিবাহ বিচ্ছেদের কারণগুলো যুগে যুগে বিবর্তিত হচ্ছে, কাপলদের প্রায়োরিটি চেঞ্জ হচ্ছে। আগের মুরুব্বিদের কাছে যা স্বাভাবিক এখন তরুণ দম্পতিদের মাঝে সেগুলো অগ্রহণযোগ্য। তাই বিবাহবিচ্ছেদের কারণ হিসেবে আধুনিক যুগে এমন অনেক ইস্যু উঠে আসছে যা হয়তো Compatibility Check করার মাধ্যমে প্রথম দিকেই চিহ্নিত করা যেতো বা সমাধান করা যেতো।
দ্বিতীয়ত, বিয়ে বা এক সঙ্গে থাকার যে কনসেপ্ট সেখানে দুজন মানুষ শুধু ভালোবাসলেই হয় না, আরো অনেকগুলো ফ্যাক্টর জড়িত থাকে, সেখানে যৌনতা থাকে, ইমোশনাল কমফোর্ট থাকে, দৈনন্দিন জীবনে ছোট বড় অ্যাডজাস্টমেন্ট থাকে, প্রেফারেন্স বা চয়েজ থাকে, ভিন্নতাকে মেনে নেওয়ার মানসিকতা কেমন সেটাও যুক্ত থাকে। তাই শুধু মাত্র যেকোন একটি ফ্যাক্টর পাওয়ার আশায় যখন কেউ বিয়ে বা লং টার্ম সম্পর্কে জড়িয়ে পরে তখন ভবিষ্যতে নানা রকম ক্রাইসিস দেখা দিবে সেটাই স্বাভাবিক, তাই যেকোন প্রকার কমিটমেন্ট এ যাবার আগে নিজেদের মধ্যে compatibility চেক করাটা জরুরী। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা যেকোন একটা বা দুইটা ফ্যাক্টরকে বেশি গুরুত্ব দেই কিন্তু অন্যান্য ইস্যুগুলোকে একেবারে ইগনোর করি। আবার এমন অনেক ইস্যু আছে যা আমরা সচেতন ভাবে ইগনোর করলেও আমাদের অবচেতন মন সেগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে যা পরে বিভিন্ন আচরণে প্রকাশ পাচ্ছে। ফলাফল একটা দ্বান্দ্বিক ও মনস্ত্বাত্ত্বিক টানাপোড়েন তৈরী হচ্ছে।
তৃতীয়ত, এই compatibility check করার বিষয়টা একেকজনের কাছে একেক রকম, তবে নিজেদের ফ্যাক্টরগুলোকে প্রথমে প্রায়োরিটি অনুযায়ী সাজিয়ে কিছু সময় দিলে ধীরে ধীরে বিষয়গুলো পরিষ্কার হতে থাকে। Compatibility Check করার উপায় হলো প্রথমে নিজের সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখা অর্থাৎ নিজের মৌলিক চিন্তা, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, আস্থা, ক্যারিয়ার এন্ড ফিন্যান্সিয়াল প্ল্যান, একক বা যৌথ পরিবারে থাকার মানসিকতা, বাচ্চা নেওয়ার মানসিকতা, অতীতের কোন ট্রমা সহ নিজ ব্যক্তিত্বের নানা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরী। তারপর পার্টনার সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া লাগবে। অতঃপর নিজেদের প্রায়োরিটি অনুযায়ী প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা, কোন বিষয়ে কে কতটুকু মেনে নিতে পারবে এবং এমনকি কোন ইস্যুতে আডজাস্ট করবে সেটি সম্পর্কেও সম্যক ধারণা থাকা জরুরী। তাছাড়াও ভবিষ্যতে কি কি ইস্যু তৈরী হতে পারে সে সম্পর্কে দুজনেরই একটি সম্ভাব্য ধারণা থাকা প্রয়োজন। এতে পরবর্তী সময়ে জটিল কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেও কিভাবে সমাধান করা যায় সেটা নিয়ে দুজনেই ইতিবাচক মনোভাব রাখতে পারবে। আর এই কম্পাটেবিলিটি চেক করার পুরো প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘ মনে হলেও মৌলিক ইস্যুগুলো আইডেন্টিফাই করতে ও বুঝতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। তবে একটি দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের ক্ষেত্রে যতক্ষণ নিজেদের কম্প্যাটিবিলিটি নিয়ে নিজের মাঝে আত্মবিশ্বাস তৈরী না হবে ততক্ষণ সময় দেওয়া উচিত। সেটা কারো ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহে আসতে পারে, আবার কারো বছরও লেগে যেতে পারে। তবে অবশ্যই সম্ভাব্য পার্টনারের সাথে এই বিষয়ে সৎ ভাবে আলোচনা করা উচিত, যাতে কোন জটিল ইস্যু কিংবা ভবিষ্যতে জটিলাকার ধারণ করতে পারে এমন ইস্যু বাদ পড়ে যায় বা ঢাকা পড়ে না যায়।
সর্বশেষ, Compatibility Check করার কোন পর্যায়ে অথবা সম্পর্কের যেকোন পর্যায়ে যদি আপনি নিশ্চিত হন যে আপনি পার্টনারের সাথে থাকতে চান না, কিংবা অন্য কাউকে ভালো লাগে, তখন অবশ্যই পার্টনারের সাথে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত আলোচনা করুন। যদি দুইজন চান সম্পর্ক নিয়ে কাজ করতে তবে সেটা করতে পারেন, প্রয়োজনে প্রফেশনালদের হেল্প নিতে পারেন। আর যদি একজন বা দুইজনই চান বিয়ে/সম্পর্কটি কন্টিনিউ করবেন না তবে সেটাও পার্টনারকে অবহিত করুন এবং বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া ইনিশিয়েট করুন। তারপর আবার নতুন কোন সম্পর্কের কথা চিন্তা করতে পারেন তবে অবশ্যই বিচ্ছেদ প্রক্রিয়ার ফলে যে মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে সেটা সেরে উঠার জন্য একটু সময় নিন। আর নয়ত একই রকম নেতিবাচক অভিজ্ঞতা বারবার হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।
ধন্যবাদ
___
ফয়সাল আহমেদ রাফি
২৯/০১/২০২৪
OUR BLOG
Read to accelerate your wellbeing
Yes, it’s true Psychotherapy Helps!

DIVORCE AND COMPATIBILITY ISSUES REALITY CHECK FOR COUPLES
