শরীফ ও মিথিলার রোমান্টিক সম্পর্ক ছিল প্রায় এক বছরের, তারপর শরীফের অন্য কাউকে ভালো লাগে তাই সে ব্রেকআপ করে মিথিলার সাথে। ব্রেকআপের প্রায় এক বছর হতে চলল মিথিলা চেষ্টা করছে কাটিয়ে উঠতে, কিন্তু সে কোনভাবেই বের হতে পারছে না ব্রেকআপের ফলে তৈরি হওয়া কষ্ট ও যন্ত্রণা থেকে। যখনি মিথিলা মনে করে এইবার সে বের হবেই হবে এই চক্র থেকে, তখনি দেখা যায় শরীফ ফোন দেয় বা টেক্সট করে। জাস্ট খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য আর নিজের কিছু আপডেট দেওয়ার জন্য। নতুন মানুষটার সাথে সংসার হতে যাচ্ছে, মাঝে মাঝে মিথিলাকে মিস করে এইসব আপডেট দিতে পছন্দ করে শরীফ। অন্যদিকে প্রতিবার মিথিলা এই আশায় ফোন টা রিসিভ করে যে শরীফ নিজের ভুল বুঝতে পেরে তার কাছে ফিরে আসবে, কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি! প্রতিবার সে একই রকম যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যায়। অথচ সে যোগাযোগ বন্ধ করে থাকতে পারছে না, নিজে কল বা টেক্সট না করলেও শরীফের কল/টেক্সট সে ইগনোর করতে পারে না, শুধু একটি আশায়, এইবার যদি সব ঠিক হয়ে যায় বা শরীফ ফিরে আসতে চায়?!
আপনি কাউকে খুব পছন্দ করেন, সেটা প্রকাশও করেছেন সেই মানুষটার কাছে। সে কিছুদিন কথাবার্তা বলে না করে দিয়েছে। আপনি চেষ্টা করছেন ভগ্ন হৃদয় নিয়ে নিজেকে নিয়ে সামনে আগাতে, কষ্টটা যাতে কম লাগে সেই চেষ্টা আপনার আছে। তাকে স্টক করা, কথা বলতে তীব্র আগ্রহ হওয়া, সবই আছে আপনার মাঝে তবুও চেষ্টা করছেন কাটিয়ে উঠতে। যখন মোটামুটি একটি স্থির অবস্থায় এসেছেন সে মুহূর্তে সে আপনাকে একটা টেক্সট করলো বা কল করলো। বিশেষ কিছু না, জাস্ট খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য, আপনি কেমন আছেন। সে জানে এই কল বা টেক্সটটা আপনার মনের মাঝে ঝড় তুলবে, আপনি তাকে নিয়ে আবার পাগলের মত চিন্তা করবেন তাকে পাইতে চাইবেন। কিন্তু সে কোন ভাবেই আপনার হবে না, বা আপনার ভালোবাসার প্রস্তাবে সাড়া দিবে না। তাহলে সে কেন নক করেছে? কারণ সে বোরিং ফিল করতেছিল! অথচ তার এই একটা কাজ আপনার কয়েক মাসের মুভ অন করার প্রসেসকে আবার ব্যাক টু দ্যা জিরোতে নিয়ে গেলো!
এই মানুষগুলো কারো এক্স, কারো ক্রাশ, কারো জাস্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু এরা প্রত্যেকের লাইফে মূর্তিমান আতঙ্ক। আপনি এমন অনেক বন্ধুকে দেখবেন যাকে তার এক্স/ক্রাশ প্যারা দিচ্ছে, এমনকি সেই বন্ধুটি হয়তো নতুন করে লাইফ শুরু করতে চাচ্ছে কিংবা তার এক্স নিজেও নতুন লাইফ শুরু করেছেন, তবুও তার লাইফে একটু বিনোদন, একটু বাড়তি আনন্দের জন্য আরেকজনের অনুভূতিকে নিয়ে বাস্কেটবল খেলছেন, অনেকে অবশ্য সাফাই গায় যে সে নিজেও এক্সকে ছেড়ে ভালো থাকতে পারছে না তাই এমন করে অথচ ছেড়ে যাওয়ার কিংবা রিজেক্ট করার সিদ্ধান্তটা তার নিজের ছিল। এই মানুষগুলোকে আমার ভয়ংকর লাগে। এরা রীতিমত অন্য মানুষের জীবনকে তুলোধুনো করে ছাড়ে, আপনার মুভ অন করার প্রসেসকে কঠিন করে তোলার যাবতীয় চেষ্টা এদের থাকে। এমন না যে তারা ইচ্ছা করে কাজটা, তারা মূলত এক ধরনের আনন্দ পায়।
এমনি একজনের সাথে পরিচয় হয়েছিল, তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি কেন এই কাজটা অন্যদের সাথে করো? সে বলল, ওরা সাফার করতেছে সেটা ওদের সমস্যা, আমাকে কেন ভুলে যাবে?! খুব গর্ব করে বলছিল আমাকে একবার কেউ পছন্দ করলে সে আর কখনো ভুলতে পারবে না, যাতে ভুলতে না পারে তাই মনে করিয়ে দেই। তার মতে কেউ যখন সত্যিকার অর্থে প্রেমে পড়ে বা ভালোবাসে, তবে আরো বেশি ইফোর্ট দিবে। আমি না করলেও লেগে থাকবে, কারণ সত্যিকার অর্থে ভালোবাসলে কেউ কাউকে ভুলতে পারে না।” আমি জানি এমন মানসিকতা ধারণ করা মানুষ আরো আছে কিনা, হয়ত আছে আর নয়ত আমরা এত টক্সিক এক্স/ক্রাশ কেমনে দেখি?!
রোমান্টিক সম্পর্ক বিষয়ে আমাদের আরেকটি ভুল ধারণা হচ্ছে প্রচুর ইফোর্ট দিতে হবে, অর্থাৎ কতটুকু ইফোর্ট দিলে আসলে সেটা পর্যাপ্ত সে সম্পর্কে ছেলে মেয়ে কারোরই ধারণা নেই। কেউ মনে করে লেগে থাকতে হবে, যতক্ষণ না পটানো যাবে! আরেক পক্ষ মনে করে কম ইফোর্ট দিচ্ছে মানে ঝামেলা আছে। অথচ দুই পক্ষই যে বিষয়টা নোটিশ করতে ভুলে যায় ইফোর্ট বা চেষ্টাটা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে না হলে সেটা আসলে ইতিবাচক কোন ফলাফল নিয়ে আসে না। হয়তো সাময়িক ভাবে মনে হবে এইটা কাজ করছে কিন্তু লংটার্ম সম্পর্কে এইটা একটা স্ট্যান্ডার্ড হয়ে যায় যা ধরে রাখা সম্ভব হয় না। তাই ইফোর্ট কখন কোথায় কতটুকু দিতে হবে সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখা উচিত। কেউ যদি সরাসরি বলে দেয় সে আগ্রহী না, তখন সেখানেই সকল প্রকার ইফোর্ট ও কমিউনিকেশন বন্ধ করা উচিত। আর কেউ যদি কথা বলার পর মনে করে এইটা কন্টিনিউ হতে পারে তখন স্বাভাবিক যে আগ্রহ এন্ড ইফোর্ট যেটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ থেকেই আসবে সেটাই কন্টিনিউ করা উচিত। আর অবশ্যই ক্লিয়ার হয়ে নিবেন তার সাথে আপনার সম্পর্কটা ঠিক কোন অবস্থায় আছে এবং সেটা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন আপনি কিভাবে আগাবেন। অবশ্যই উপরের ক্রাশ বা এক্স টাইপের মানুষদের খপ্পরে পড়বেন না, আর কখনোই সেকেন্ড ক্লাস ফ্রেন্ড হয়ে থাকবেন না।
কখন বুঝবেন আপনি সেকেন্ড ক্লাস ফ্রেন্ড, যখন সে সবসময় আপনার স্পেশাল ফ্রেন্ড হিসেবে ট্রিটমেন্ট চাইবে, অধিক প্রায়োরিটি চাইবে, বন্ধুর থেকেও বেশি কিছু কিন্তু কখনোই ক্লিয়ার কমিউনিকেশন করবে না, কোথাও সামাজিক স্বীকৃতি দিবে না, শুধুই প্রাইভেট স্পেশাল ফ্রেন্ড, তাহলে বুঝবেন আপনি তার সেকেন্ড ক্লাস ফ্রেন্ড। সে হয় প্রথম ক্লাস ফ্রেন্ড পেয়ে গিয়েছে কিংবা খুঁজতেছে! তাকে পাওয়া মাত্রই আপনার গুরুত্ব কমে যাবে, সুতরাং কোন একদিন তার মন পাওয়া যাবে এই আশায় ইফোর্ট দিয়ে যান তাহলে খুবই হতাশ হতে হবে।
আপনি যদি উপরোক্ত কোন একটি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেয়ে থাকেন এবং এখনো সাফার করতে থাকেন, তবে অবশ্যই আপনার নিজেকে বের করে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এই উদ্যোগটা আপনি নিতে পারেন সর্বপ্রথম সকল প্রকার কমিউনিকেশন মাধ্যম অফ করে দিয়ে। অর্থাৎ ওই ব্যক্তির সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ রাখবেন না। আমরা নানা উছিলায় তার সাথে কমিউনিকেশন চ্যানেল ওপেন রাখি, ভদ্রতার খাতিরে রিপ্লাই না দিয়ে চুপ থাকতে পারি না। সেটা হতে পারে একই অফিসে কাজ করি বলে কিংবা একই কমিউনিটিতে বিলং করি বলে, কিংবা পারিবারিক সম্পর্ক আছে বলে। এই সকল ক্ষেত্রে প্রথম কাজ হলো পার্সোনাল কমিউনিকেশন সম্পূর্ণ অফ করা, তারা আপনার ওয়েল উইশার হিসেবেও অনেক সময় নক করতে পারে বা কল করতে পারে, সেটাও সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ রাখা যতোদিন না আপনি নিজে মুভ অন করতে না পারছেন ততদিন। মুভ অন করার পর স্বাভাবিক যোগাযোগ করতে পারেন তখন আর ঝামেলা হবে না।
দ্বিতীয়ত যেকোন কনটেক্সট-এ যদি যোগাযোগ করতেই হয় তবে সেটা ফরমাল এবং শর্ট রাখা, কোন ভাবেই পার্সোনাল না হওয়া। বাউন্ডারি সেট করা এবং এর বাইরে কোন ভাবেই কমিউনিকেশন না করা। সবশেষে নিজের মুভ অন প্রসেসকে ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। আমি একজনকে চিনি যে তার ক্রাশের প্রেমে ৭ বছর ধরে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে তার কষ্ট হচ্ছিলো, অথচ তার ক্রাশ বিয়ে করে বাচ্চা সংসার নিয়ে খুব ভালো আছেন। তাই মোটেও অপেক্ষা করবেন না যে অটোমেটিক কেটে যাবে, বরং নিজের যত্ন নেওয়া, প্রয়োজনে প্রফেশনাল হেল্প নিয়ে নিজেকে রিকোভার করা জরুরি। কারণ আপনি আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন এবং আবারও উপযুক্ত কোন ব্যক্তির প্রেমে পড়তে পারবেন। তাহলে কেন অপেক্ষা করছেন এমন কারো জন্য যে কখনোই আপনার ভালোটা চিন্তা করছে না?
সবশেষ মন্তব্য, প্রেম সুন্দর, চমৎকার একটি অভিজ্ঞতা, কিন্তু সবসময় আমরা সঠিক মানুষের প্রেমে পড়বো বিষয়টা এমন না। আমরা ভুল মানুষের প্রেমেও পড়তে পারি, এন্ড ইটস ওকে; তেমনি একই মানুষের প্রেমে বারবার পড়তে পারি, ভালোবাসার মানুষটির প্রেমে বহুবার বহুভাবে পড়া যায়। তাই এইটাকে যেমন গ্লোরিফাই করার কিছু নাই, তেমনি এইটার জন্য নিজের জীবনের অন্যান্য প্রায়োরিটি ও লক্ষ্য পরিবর্তন করে ফেলতে হবে বিষয়টা এমনও না। ভালোবাসতে শিখুন নিজেকে, দ্যান সেই ভালোবাসা ছড়িয়ে দিন অন্যদের মাঝে। বিনিময়ে কোন প্রত্যাশা না রাখা ভালো, সর্বোচ্চ একটু ভালো আচরণ আশা করতে পারেন কিংবা একগুচ্ছ কাঠগোলাপ!
ধন্যবাদ
ফয়সাল রাফি
*যেকোন মতামত, দ্বিমত, মন্তব্য সাদরে আমন্ত্রিত।
*আমি শুধু কল/টেক্সট করার মত আচরণকে তুলে ধরলাম, এর বাইরেও এক্স’র সাথে কমফোর্ট ফিল করতো তাই ব্রেকআপের পরও সব শেয়ার করা এবং যোগাযোগ রাখা, নিজেরা নতুন মানুষের সাথে রিলেশনশিপে যাওয়া সত্ত্বেও এক্সের সাথে ইন্টিমেট ইমোশনাল এন্ড সেক্সুয়াল রিলেশনশিপে যুক্ত হওয়ার উদাহরণও চারপাশে রয়েছে।
*প্রতিটা নাম ও চরিত্র কাল্পনিক, শুধু আচরণগুলো বাস্তব ঘটনার আলোকে লেখা!