৯০ দশকের কিডস বলে দাবি করা জেনারেশনের একাংশের সবথেকে বাজে দিক হচ্ছে এরা নিজেদের প্যারেন্টদের টক্সিক কাজকর্মকে গ্লোরিফাই করে এবং নিজেরাও সেগুলোর চর্চা করে নিয়মিত। যেমন সন্তানদের স্কুল থেকে বিয়ে, সকল সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়ে নেওয়া, গায়ে হাত তোলা, ভার্বাল, ইমোশনাল এবিউজ অব্যাহত রাখা, ইত্যাদি।
নিজের ইন্সিকিউরিটি এবং ডমিনেট করার মানসিকতা দিয়ে সন্তানদের ১২টা বাজিয়ে সেটাকে আবার তোমার কল্যাণেই তো করতেছি দাবি করার এক অলৌকিক ক্ষমতা নিয়ে জন্ম নেয় ৯০ দশকের কিছু পিতামাতা। নতুন কিছু শিখবেন না, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেকে আপডেট করবেন না, উল্টো পুরাতন ধ্যান ধারণা পরের জেনারেশনকে বাধ্য করবে মানতে আর সামাজিক প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দাবি করবে উনার সন্তানদের কে মানুষ করেছেন। অথচ সেই সন্তান যে বহু আগেই তাদের ছেড়ে পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছে সেটা কখনো বুঝবেন না। (সেই চেষ্টার একেকটা উদাহরণ সাম্প্রতিক আত্মহত্যা র ঘটনাগুলো, বিশেষ করে ব্র্যাকের এক শিক্ষার্থী বাবার আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে আত্মহত্যা করেছে এবং সেই বাবাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে)
আর আত্মহত্যা করলে বা মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে উল্টো অন্যদের দোষারোপ দিয়ে নিজের টক্সিক আচরণকে জাস্টিফাই করতে শুরু করে। কখনোই নিজের ভুল বা দোষ স্বীকার করবে না, উল্টো ভিকটিম ব্লেমিং জারি রাখবে। অন্যথা নিজেকে ভিকটিম হিসেবে সবখানে তুলে ধরবে, একটা সাইকোলজিক্যাল গেম তৈরি করবে। কোনটাই যদি কাজ না করে তখন নিজের অর্থনৈতিক অবস্থাকে হাতিয়ার হিসেবে সামনে নিয়ে আসবে। আর এই ধারা তাদের সন্তানদের মাঝেও প্রবাহিত হবে লিগাসি হিসেবে।
অথচ ৯০ দশকের পিতামাতাদের মধ্যে এমন মানুষও দেখেছি যারা ছেলে মেয়েদের সাথে সাথে নিজেকে আপডেট করেছেন, আন্তরিক ভাবে বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য কাজ করেছেন। বন্ধু হিসেবে পাশে থেকেছেন, বাউন্ডারি শিখিয়েছেন সন্তানদের কে। নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেমন শিখিয়েছেন তেমনি আবার যেকোন অবস্থায় সন্তানের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন সর্বোচ্চ। ব্লেম গেম কখনো দেখতে হয় নাই এই বাচ্চাদের, উল্টো বাবা মা কে দেখেছেন একজন আরেকজনের পাশে।
এখন মজার বিষয় হচ্ছে দুই গ্রুপের সন্তানদের মাঝেই সফল ও ব্যর্থতার নিদর্শন আছে। পার্থক্য শুধু প্রথম গ্রুপের সফল বা ব্যর্থ সন্তানদের প্রচুর মানসিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে যা সন্তানদের ব্যক্তিগত ও প্রফেশনাল লাইফ কে এফেক্ট করছে, যার কোন কিছুই বাবা মা জানেন না। জানলেও দোষ দিচ্ছেন সন্তানকেই। আর দ্বিতীয় গ্রুপের মধ্যে যেসকল মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে সেটা সন্তান নিজেই ডিল করতে পারছে, উল্টো বাবা মা সাপোর্ট দিয়ে সহজ করে দিচ্ছেন সব কিছু। অথচ দুই গ্রুপের বাবা মায়েদের উদ্দেশ্যই কিন্তু সন্তানের মঙ্গল এইটা নিয়ে আমার কোন দ্বিমত নেই, পার্থক্য শুধু আপনার অ্যাপ্রোচে এবং নতুন কে মেনে নেওয়ার মানসিকতায়।
পিতামাতা হিসেবে আপনি কেমন হবেন সেই সিদ্ধান্ত আপনার, কিন্তু সন্তানের জীবনটাকে নষ্ট করার কোন অধিকার আপনার নেই। কারণ সে আপনার মাধ্যমে পৃথিবীতে আসছে, আপনার সম্পত্তি হিসেবে নয়। একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে যদি তার সকল অধিকার নিশ্চিত করতে না পারেন তবে সন্তান না নেওয়াই উত্তম। সন্তান লালন পালন করা বা প্যারেন্টিং হলো একটি স্কিল, বিশেষ করে আধুনিক যুগের কর্মব্যস্ত বাবা মায়েদের জন্য এই স্কিল অর্জন করা খুবই দরকারি। তাই সন্তান নেওয়ার আগে এই দক্ষতা অর্জনের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নিন, প্রয়োজনে প্রফেশনালদের হেল্প নিন। তাহলে অন্তত সন্তান ও আপনার নিজের জীবন কিছুটা হলেও আনন্দদায়ক হয়ে উঠবে, সেই সাথে সন্তানের মানসিক বিকাশ নিশ্চিত হবে।
সাম্প্রতিককালে স্কুল/কলেজ গোয়িং বাচ্চাদের মাঝে এমন কিছু আচরণ লক্ষ্য করা গিয়েছে যা সকলের জন্য উদ্বেগজনক। বর্তমান প্রজন্মের বাচ্চাদের মানসিকতার সাথে বাবা মা এবং শিক্ষকদের মানসিকতার যে তফাৎ সেটা তুলে ধরা, সেগুলোর কারণ ব্যাখ্যা করা এবং এই আচরণগুলো কিভাবে ডিল করা যায় সে বিষয়ে লেখার ইচ্ছা থেকেই এই আলোচনা শুরু করা। আর বর্তমান প্রজন্মের বাচ্চাদের আচরণ ও মানসিকতা বুঝতে হলে তাদের পিতামাতার আচরণ ও মানসিকতা আমাদের বুঝা দরকার, সেই জন্যেই এই লেখায় নব্বই দশকের সন্তান ও পিতামাতার অবতারণা। আমি জানি অনেকেরই ‘নব্বই দশক’ অনুভূতিতে আঘাত লাগবে, কিন্তু স্পেড কে স্পেড বলাই শ্রেয় মনে হলো।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য। যেকোন ফিডব্যাক বা মতামত সাদরে গৃহীত হবে।
বিনীত
ফয়সাল আহমেদ রাফি
ফাউন্ডার এন্ড চিফ সাইকোলজিস্ট
ফয়সাল রাফি এন্ড এসোসিয়েটস