১.
ব্যক্তি ১: আপনি কেমন প্লেস পছন্দ করেন কোথাও বসার জন্য।
আমি: নিরিবিলি বা মানুষ কম থাকে এমন কোথাও। বিশেষ করে আমি রেস্টুরেন্ট পছন্দ করি এই ক্রাইটেরিয়ার উপর ভিত্তি করে।
ব্যক্তি ১: এতে ফায়দা কি হয় আপনার?
প্রশ্নটা নির্ভেজাল হলেও প্রশ্নটা করার টোন এবং ইঙ্গিত ছিল পরিষ্কার।
আমি: আপনার কাছে কি মনে হয় কি রকম ফায়দা হতে পারে?
ব্যক্তি ১: কাদের নিয়ে যাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করবে। (স্পষ্টত ইঙ্গিত করছেন কোন মেয়ে যাচ্ছি কিনা এবং গিয়ে কি করছি সেটার উপর)
২.
কোয়ালিটি টাইম এন্ড কিস নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, পাবলিক কমেন্টে খুব বেশি কিছু বলে নাই কিন্তু ইনবক্সে তাদের গুরুত্বপুর্ণ মতামত জানিয়েছে।
অধিকাংশ মতামত ঘুরেফিরে ছিল এমন, কোয়ালিটি টাইম মানেই তো সেক্স করা, হোক সেটা একচুয়াল ইন্টারকোর্স অথবা ফোন সেক্স অথবা সেক্সটিং। সেক্স করলে সেটা ভালো সময় আর নয়ত সেটা ভালো সময় না। আমি যেহেতু গতকাল স্ট্যাটাস এক্সপ্লেইন করেছি সংক্ষেপে, সেটাই আবার তাদের কে বললাম। এখন মনে হচ্ছে এইটা নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে নিয়মিত বলতে হবে।
আমার মন্তব্য:
যে দেশেদের অধিকাংশ মানুষ কোয়ালিটি টাইম মানে সেক্স করা বুঝে, এবং নিরিবিলি জায়গা মানেই মেক আউট করা বুঝে অথবা প্রেম করা মানেই খেয়ে ছেড়ে দেওয়া মনে করে সে দেশের মানুষ আবার প্রশ্ন করে তারা কেন ট্রু লাভ খুঁজে পায় না! তারা অবাক হয় তাদের লাইফে কেন কোন ভালোবাসার মানুষ আসে না যার সাথে জীবনটা পার করে দেওয়া যায়? অবশ্য এইটাও সত্যি যে গত কয়েক দশকে আমাদের সমাজে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা আমাদের অনেকের মধ্যে এমন বিরূপ মনোভাব তৈরি করেছে প্লাস আমাদের সচেতন শিক্ষার অভাব সবসময়ই ছিল।
সেক্সুয়ালি ফ্রাস্ট্রেড একটা লাইফ পার করে নিজের চাইল্ডহুড থেকে এডাল্টহুড পর্যন্ত ঘটে যাওয়া নানারকম পাওয়া না পাওয়ার হিসেব নিকেশ কে মেনে নিতে না পারায় তৈরি হওয়া যে গ্যাপ বা মানসিকতা আপনার লজিক্যাল ও সুস্থ চিন্তা ভাবনাকে প্রভাবিত করে কলুষিত করছে সে বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। আর এই সচেতন হওয়ার উপায় হচ্ছে নিজেকে ক্রমাগত বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষণের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া।
যদি আপনি নতুন কিছু শিখতে না পারেন বা নিজের সম্পর্কে নতুন কোন তথ্য গ্রহণ করতে না পারেন তাহলে আপনি ধীরে ধীরে সেই মানুষটায় পরিণত হবেন যা আপনি কখনোই হতে চান নি হয়তো। কেবল মাত্র সচেতন হলেই আপনি পরিবর্তন নিয়ে কাজ করতে পারবেন, অন্যথায় জেনারেশন ওয়াইজ একটা অর্থব ফ্রাস্ট্রেড জাতি তৈরি করতে থাকবো আমরা। হোক সেটা যৌনতার দিক থেকে, মানসিক, শারীরিক কিংবা অর্থনৈতিক দিক থেকে, সেগুলোর প্রভাব পড়বে সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় দিকগুলোতে।
আর এইগুলোর প্রভাব ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে পড়বে বা পড়ছে, হয়তো আপনি নিজেও বুঝতে পারছেন না কেন আপনি একাডেমিক লাইফে ভালো করছেন না, কেন আপনি অফিসে ভালো করতে পারছেন না, কেন আপনার সম্পর্কগুলো ঠিক থাকছে না, কেন পরিবারের বা বন্ধুদের সাথে সম্পর্কগুলো ভালো থাকছে না। সুতরাং নিজের সম্পর্কে জানুন, সঠিক ভাবে নিজেকে বোঝার চেষ্টা করুন, কোন টক্সিক সম্পর্কে নিজেকে রাখা যেমন কোন ভাবেই যৌক্তিক না, তেমনি টক্সিক একটা লাইফ জাস্টিফাই করে করে বেচেঁ থাকাটাও আপনার জন্য চ্যালেঞ্জ। এই এই চ্যালেঞ্জ থেকে মুক্তি পেতে হলে বের হয়ে আসতে হবে আপনার জাজমেন্টাল মানসিকতা থেকে, নিজের প্রতি ও অন্যের প্রতি জাজ করার আগে বিষয়গুলো Nonjudgmental দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার চেষ্টা করা জরুরি। নিজের ও অন্যের অনুভূতি কে বুঝতে পারা, সম্মান করা, মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করা জরুরি। সেই সাথে সহমর্মী হওয়ার চর্চা করতে হবে, শুধু অন্যের প্রতি না, আগে নিজের প্রতি সহমর্মী হওয়ার চেষ্টা করুন তবেই অন্যের প্রতি হতে পারবেন। সর্বশেষ নিজের needs গুলো বুঝার চেষ্টা করুন এবং যেকোন ছোট বড় ক্রাইসিসে নিজেকে here & now তে রাখার চেষ্টা করুন, অর্থাৎ mindful হোন যা আপনাকে সাহায্য করবে নিজেকে ও অন্যকে বুঝতে, পাশাপশি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে।
আর এই বিষয়গুলো কোন এক কালীন কাজ না, এইগুলো চর্চা করার বিষয়, যতবেশি চর্চা করবেন ততবেশি আপনার আচরনে এইগুলোর প্রভাব আমরা দেখতে পাবো। তখন অন্তত শুধু সেক্স আর মেক আউট কেন্দ্রিক আপনার জীবনটা থাকবে না, এর বাইরে পৃথিবীর অনেক রং আছে, জীবনের অনেক ব্যাপ্তি আছে। সেগুলো উপভোগ করুন, জীবনটা কে গ্রহণ করতে শিখে যাবেন সহজেই।
ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্য।
বিনীত
ফয়সাল আহমেদ রাফি ফাউন্ডার এন্ড চিফ সাইকোলজিস্ট ফয়সাল
রাফি এন্ড এসোসিয়েটস