সাধারণত আমাদের কাছে চার ধরনের ক্লায়েন্ট আসেন:
১. আমি মেডিসিন নিতে চাই না, সাইকিয়াট্রিস্ট অনেকগুলো মেডিসিন দিয়েছে, সেগুলোতে কোন কাজ হয় না, উল্টো সাইড ইফেক্ট নিয়ে সারাদিন কাটাইতে হয়। তাই আপনার কাছে আসছি, মেডিসিন ছাড়া ঠিক করে দেন।
২. আপনারা তো শুধু কথা বলেন, কথা বলে কি কোন কাজ হয়! আপনি আমাকে মেডিসিন দিবেন, সাথে থেরাপিও দিবেন। সাইকিয়াট্রিস্ট খালি মেডিসিন দেয়, আর একবার মেডিসিন নিলে সারা জীবন খাইতে হয়। আমি চাই আপনি অল্প মেডিসিন দিয়ে আমাকে ঠিক করে দিবেন। (উনি জানেন না যে সাইকোথেরাপিস্ট মেডিসিন প্রেসক্রাইব করতে পারেন না)
৩. আমি জানি না আমার কি করতে হবে, আমি সুস্থ্য স্বাভাবিক হইতে চাই। শুনছি মেডিসিন নিলে সারাদিন শুধু ঘুম পায়, কোন কাজ হয় না। সারাজীবন নাকি সাইড ইফেক্ট থাকে, আমি সাইড ইফেক্ট নিয়ে সারাজীবন চলতে চাই না, আপনি আমাকে ঠিক করে দেন।
৪. এই গ্রুপের সদস্যরা জেনে বুঝে তারপর থেরাপিতে আসেন। যদি সাইকিয়াট্রিস্ট মেডিসিন প্রেসক্রাইব করেন তবে সেটা নিয়মিত নেন পাশপাশি সাইকোথেরাপি সেশন গুলোতে নিয়মিত আসেন ও সে অনুযায়ী কাজ করেন। ফলাফল রিকভারি করে ফেলেন।
এখন উপরোক্ত প্রথম তিন গ্রুপের একটা কমন প্রশ্ন থাকে, মেডিসিন কি আদৌ কাজ করে? মেডিসিনের তো অনেক সাইড ইফেক্ট (কি কি সাইড ইফেক্ট আছে?), সেগুলো তো চাই না। সাইড ইফেক্ট গুলো কি সাময়িক নাকি সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে আমি যে কথাগুলো বলি সেগুলো হলো, মেডিসিন অবশ্যই কাজ করে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসায় ঔষুধের প্রয়োগ সেই প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। প্রাচীনকালের ডাক্তার থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের সাইকিয়াট্রিস্ট, সবাই কম বেশি সফল ভাবে ঔষুধের প্রয়োগ করে আসছেন মানসিক রোগের চিকিৎসায়। যুগে যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞান উন্নতি লাভ করায় ও বিভিন্ন প্রযুক্তির সহায়তায় এখন প্রাচীনকালের তুলনায় আরো উন্নত, সঠিক ও মান সম্পন্ন ঔষুধ তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করার জন্য। বিশেষ করে আধুনিক যুগে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ঔষুধের কার্যকরিতা নিশ্চিত হওয়ার পরেই রোগীকে প্রেস্ক্রাইব করতে অনুমতি দেওয়া হয়।
এখন আসি মেডিসিনের আসল কাজটা কি সে বিষয়ে। মানসিক রোগের চিকিৎসায় যে মেডিসিন ব্যবহার করা হয় তার কাজ হচ্ছে ব্রেইনের স্পেসিফিক অংশের বিভিন্ন ক্যামিকেল ও নিউরোট্রান্সমিটারগুলো কে ম্যানিপুলেট করা। বিভিন্ন ধরণের মানসিক রোগের বিভিন্ন পর্যায়ের ধরণ ও সিম্পটম অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন ঔষুধ রয়েছে। যেমন ডিপ্রেশনের জন্য এমন ঔষুধ আছে যা আমাদের মুড কে পরিবর্তন করতে হেল্প করে।
এখন মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে যেইটা কমপ্লিকেটেড ইস্যু সেটা হলো মেডিসিন ও আপনার আচরণ sync করানো। ঔষুধের প্রতিক্রিয়া ও তার সাথে আপনার শরীর, অনুভুতি, চিন্তা এবং আচরণ হয়ত একই গতিতে পরিবর্তন নাও হইতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার চিন্তা, অনুভুতি ও আচরণ পরিবর্তন করার জন্য বিভিন্ন সাইকোথেরাপি ব্যবহার করতে হইতে পারে। যেমন CBT, REBT, TA, NVC, Gestalt Therapy, Behaviour Modification Approach ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ ঔষুধের পাশাপশি আপনি যখন সাইকোথেরাপি নিবেন তখন দৈনন্দিন জীবনে আপনি আবার প্রোডাক্টিভ পারসন হিসেবে ব্যাক করতে পারেন।
অনেকের ডিপ্রেসন বা অন্য কোন মানসিক সমস্যার ধরন এমন মাইল্ড লেভেলে থাকে যেখানে হয়ত মেডিসিন দরকার পড়বে না, শুধু থেরাপি নিলেই হবে, আবার অনেকের অল্প সময়ের জন্য মেডিসিন দরকার পড়বে, আবার কারো কারো অনেক লম্বা সময় বা জীবনভর মেডিসিন লাগতে পারে। যেহেতু মেডিসিন একটা ক্যমিকেল, ব্রেইনে সেটা জোর করে পরিবর্তন করতে যাচ্ছে এবং আপনার চিন্তা/অনুভুতি/আচরণের সাথে sync হচ্ছে না এই পরিবর্তন; তাই ঔষুধের মাত্রা ও ব্যবহারের সময়সীমা ভেদে সাইড ইফেক্ট দেখা দিবে। যে ডাক্তার (সাইকিয়াট্রিস্ট) আপনাকে প্রেসক্রাইব করবেন উনাকে আপনি ভালো করে জিজ্ঞেস করে নিবেন তাহলে অনেক ভালো ধারণা পাবেন সাইড ইফেক্ট সম্পর্কে।
কমন কিছু সাইড ইফেক্ট রয়েছে যেমন ঝিমুনি আসা, ক্লান্ত বোধ হওয়া, বমি বমি ভাব, মাথা ব্যথা, দুর্বল বোধ করা, গলা মুখ শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। খুব তীব্র সাইড ইফেক্ট গুলোর মধ্যে আছে আত্মহত্যা প্রবণতা তৈরি হওয়া, যৌন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব, শারীরিক কোন স্থায়ী ক্ষতি ইত্যাদি। কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শে ঔষুধ সেবন করলে ও ডাক্তার আন্তরিক ভাবে আপনাকে বিষয়গুলো বুঝিয়ে দিলে সাইড ইফেক্ট গুলো সহজেই ম্যানেজ করা সম্ভব হয়। অধিকাংশ সাইড ইফেক্ট সাময়িক, তবে রোগের তীব্রতা ভেদে সেগুলোর স্থায়ীত্ব ভিন্ন ভিন্ন হইতে পারে। আমাদের দেশে মানসিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষুধগুলোর সাইড ইফেক্ট নিয়ে অনেক নেতিবাচক একটি ধারণা আছে যেটি আমার কাছে মনে হয় সচেতনতার অভাব।
এখন আসি আপনি ঔষুধ নিবেন কি নিবেন না বিষয়ে। এইখানে পরিস্কার করে বলতে চাই আপনি আমি আমরা কেউ এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না শুধু মাত্র সংশ্লিষ্ট ডাক্তার ব্যতীত। এবং ডাক্তার আপনার মানসিক রোগের উপসর্গ ও সেগুলোর তীব্রতা দেখে ঠিক করবেন কোন ঔষুধ কতটুকু পরিমাণে কতদিন ব্যবহার করতে হবে। আমরা সবাই দ্রুত সুস্থ্য হইতে চাই কিংবা সামান্য ভালো বোধ করলেই আর ফলো আপ করি না কিংবা ঔষুধের কোর্স সম্পন্ন করি না। শারীরিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে অনেক ক্ষেত্রে উৎরে গেলেও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে এই আচরণ খুবই মর্মান্তিক পরিণতি নিয়ে আসতে পারে, বিশেষ করে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ইস্যু গুলো দীর্ঘদিনে তৈরি হয়; তাই এর চিকিৎসা ও রিকোভারি করাটাও সময় সাপেক্ষ। তাই এই বিষয়ে যখন ঔষুধ সেবনের কথা আসে তখন নিজে নিজে সিদ্ধান্ত না নিয়ে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অবশ্যই কর্তব্য।
সর্বশেষ, ডিপ্রেসন বা যে কোন মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ইস্যু সলভ করা ও ডিল করা সময় সাপেক্ষ। অনেকে দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য অন্যের প্রেসক্রিপশন দেখে ঔষুধ খেয়ে ফেলে কিন্তু পরে আরো ক্ষতির সম্মুখীন হয়, আবার অনেকে ভয়ে ঔষুধ খেতে চায় না শুধু থেরাপি নিতে চায় তাদের জন্যেও কঠিন হয় রিকভারি করা। তাই অনুরোধ করবো একজন ভালো ও আন্তরিক সাইকিয়াট্রিস্ট ও সাইকোলজিস্ট এর সাথে Consult করে তবেই ঔষুধ ও থেরাপি তে যান। কোন অবস্থাতেই নিজে নিজে ডায়াগনোসিস করে বা যেকোন ঔষুধ নিবেন না।
মানসিক রোগের চিকিৎসায় ঔষুধ ও থেরাপি একটি অন্যটির বিকল্প নয়, বরং সহযোগী। দুইটির প্রয়োগ ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় হয়ে থাকে, সুতরাং কোন ভাবেই ভেবে বসবেন না যে থেরাপি নিলেই আর ঔষুধ লাগবে না, আবার ঔষুধ নিলে থেরাপি লাগবে না। দুইটির প্রয়োগ ও কার্যকরিতা আলাদা কিন্তু খুবই প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপুর্ণ। একজন সাইকিয়াট্রিস্ট (ডাক্তার) ও একজন সাইকোলজিস্ট (কাউন্সেলিং/ক্লিনিক্যাল) এর সাথে কথা বলে এবং তারা আন্তরিক ভাবে বুঝিয়ে দিলে সহজেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনার করনীয় সম্পর্কে।
কখন সাইকোথেরাপি নিবো এবং থেরাপির আদ্যপান্ত নিয়ে আরেকদিন আলোচনা করব।
বিঃ দ্রঃ ১। আমি ইচ্ছা করেই কোন প্রকার ঔষুধের নাম উল্লেখ করি নি, দুইটি কারনে, প্রথমত আমি সাইকোলজিস্ট যে কোন ভাবেই কোন ঔষুধ কাউকে প্রেস্ক্রাইব করতে পারে না; এমনকি সে জানলেও; দ্বিতীয়ত অনেকেই পোষ্টে কোন ঔষুধের নাম দেখলে সেটাই ব্যবহার করা শুরু করে যা খুবই বিপদজনক। করোনাকালিন সময়ে দেখতে পেয়েছি ভুল্ভাল ঔষুধের নামের ছড়াছড়ি যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর।
বিঃ দ্রঃ ২। আমি জানি বাংলাদেশে অনেক অসাধু ডাক্তার, সাইকোলজিস্ট, ঔষুধ বিক্রেতা রয়েছেন যারা শুধু নিজের সুবিধার জন্য রোগিকে অনেক সময় ভুল দিকে ধাবিত করে, এর জন্যে আমি দুঃখিত। তবে আমরা নিজেরা যদি সচেতন হই সেক্ষেত্রে সঠিক দিক খুজে পাওয়া সহজ হবে।
বিঃ দ্রঃ ৩। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন প্রকার ঔষুধ এমনকি নাপা প্যারাসিটামল বা ঘুমের ঔষুধ কোনটাই সেবন করবেন না।
বিঃ দ্রঃ ৪। কেউ চাইলে এই লেখাটা পড়তে পারেন
OUR BLOG
Read to accelerate your wellbeing
Yes, it’s true Psychotherapy Helps!

DIVORCE AND COMPATIBILITY ISSUES REALITY CHECK FOR COUPLES
